রমজানে গর্ভবতী ও নতুন মায়েদের করণীয়

অনেকেই মনে করে রমজানে গর্ভবতী বা ল্যাকটেটিং মায়েরা রোজা রাখতে পারবেন না। গর্ভাবস্থায় আপনার যদি কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকে, যদি আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকেন, আপনার ডাক্তার আপনাকে বলেন আপনি সুস্থ, কোনো অসুস্থতা না থাকে তাহলে অবশ্যই গর্ভাবস্থায় রোজা রাখতে কোনো সমস্যা নেই। তবে অবশ্যই ইফতার ও সাহরীটা পুষ্টিগুন সম্পন্ন ও সুন্দর হতে হবে।

রমজানে গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যকথা:

গর্ভবতী মায়েরা কখন রোজা রাখতে পারবেন?

অনেকেই মনে করে গর্ভবতী বা ল্যাকটেটিং মায়েরা রোজা রাখতে পারবেন না। গর্ভাবস্থায় আপনার যদি কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকে, যদি আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকেন, আপনার ডাক্তার আপনাকে বলেন আপনি সুস্থ, কোনো অসুস্থতা না থাকে তাহলে অবশ্যই গর্ভাবস্থায় রোজা রাখতে কোনো সমস্যা নেই। তবে অবশ্যই ইফতার ও সাহরীটা পুষ্টিগুন সম্পন্ন ও সুন্দর হতে হবে।

অনেক ল্যাকটেটিং মায়েরাও রোযা রাখা নিয়ে চিন্তায় পরেন অনেকের ধারণা রোজা রাখলে বুকের দুধ কমে যায় এই ধারণাটাও ভুল।রোজা রাখলে এতে কোনো অসুবিধা নেই। পারবেন। তবে ল্যাকটেটিং মায়েদেরকে অবশ্যই  ইফতার ও সাহরীটা খুব যত্নের সাথে সাজাতে হবে, প্রচুর তরল খাবার সেখানে থাকতে হবে।

রমজানে গর্ভবতী মায়ের খাবার :

রমজানে ইফতার ক্ষেত্রে পরামর্শ হলো-

✔️ ইফতারে – ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত তেল, ঝাল খাওয়া পরিহার করুন। খেতে হবে স্বাস্থ্যকর কিছু যা সারাদিনের পানি, প্রোটিন, কার্বহাইড্রেট, ফ্যাটের চাহিদা পূরণ করে।

✔️প্রচুর পরিমানে পানি, আখের চিনি দিয়ে যেকোনো ফ্রুট জুস ( সাদা চিনি পরিহার করবেন) , চিয়াসিড মিশ্রিত জুস, খেজুর, ওটস মিল্ক, ডিম, এক গ্লাস দুধ ( দুধে মধু, কালো জিরা দিয়ে খেতে পারেন)

-✔️ফলের মধ্যে – তরমুজ, আনার, আপেল, কলা, পেয়ারা, মাল্টা, কমলা এগুলো ভালো। তরমুজে খেজুর মিক্স করে খেতে পারেন সুন্নাহ অনুযায়ী। যখন ই কোনো সুন্নাহ ফুড খাবেন সুন্নাহ মনে করে ভালোবেসে খাবেন তাহলে ইন শা আল্লাহ পুষ্টিগুনের পাশাপাশি সাওয়াবও পাবেন।

✔️যদি ভাত খান এক্ষেত্রে মাছ, মাংস, সবজি খেতে পারেন৷ সবজির মধ্যে ল্যাকটেটিং মায়েদের জন্য লাউ টা অনেক উপকারী। লাউ সবার জন্য ই উপকারী। লাউ দিয়ে মাংস, সবজি বা ডাল দিয়েও রান্না করতে পারেন। লাউও সুন্নাহ সবজি। আমাদের রসুলুল্লাহ ﷺ লাউ খুব ভালোবাসতেন, তাই লাউ ভালোবেসে খাবেন।

-✔️গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি আঁশযুক্ত, প্রোটিনযুক্ত ও ফ্যাটসম্পন্ন খাবার গ্রহণ করুন কারণ এসব উপাদান ধীরগতিতে পরিপাক হয় বিধায় ক্ষুধা কম লাগবে।

✔️পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।

সাহরী:

✔️ সাহরীর ক্ষেত্রে আপনাদের জন্য সর্বপ্রথম পরামর্শ হলো কখনোই সাহরী মিস করবেন না।

✔️খেজুর অবশ্যই খাবেন (সুন্নাহ মেনে খাবেন), মেইন ফুড হিসেবে ওটস মিল্ক সাথে বাদাম ও ফল মিক্স করতে পারেন, সিদ্ধ ডিম ও দুধ, ভাত মাংস বা মাছ / ডিম ও সবজি, চিড়া দৈ। অবশ্য প্রচুর পরিমানে পানি। একবারে বেশি পানি পান করা যাবে না। একটু একটু করে খেতে হবে।

ল্যাকটেটিং মায়েরাও এগুলোও ই খাবেন আলাদা করে কিছু কথা হলোঃ  আপনারা অবশ্য দৈনিক দুই গ্লাস দুধ পান করবেন। অনেকে ভাবেন রোযা রাখলে বাচ্চা পর্যাপ্ত মিল্ক পায় না কিন্ত এটা ভুল। রোযা অবস্থাতেও আপনার শরীর আগের মতোই মিল্ক উৎপন্ন হয়। রোযার কারণে মায়ের শরীরে (রমজানে গর্ভবতী মায়ের)ক্যালরির ঘাটতি হলেও তা বুকের দুধের পরিমাণের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না আলহামদুলিল্লাহ। তাই এতে কোনো সমস্যা নেই। তবে অবশ্যই খাবার দাবারের ব্যপারে যত্নশীল হতে হবে।

রমজানে ঔষধ খাওয়ার নিয়ম:

রমজানে গর্ভবতী বা নতুন মায়েদের নিয়মিত কিছু ওষুধ খেতে হয়। দিনের বেলার ওষুধগুলো রাতে খেয়ে নিবেন ইন শা আল্লাহ। আর যেসব ওষুধ দুইবার খাবার নিয়ম আছে তা ইফতারের সময় একবার ও সাহরীতে আরেকবার খেয়ে নিবেন।

গর্ভবতী মায়েরা কখন রোজা রাখতে পারবেন না?

গর্ভাবস্থায় যাদের ডায়বেটিস আছে তারা রোজা রাখার ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ভাবেই রোজা রাখবেন না। রোজা রাখতে ডাক্তার যদি বলে তখন সেক্ষেত্রেও ব্লাড সুগ্যার যেন কমে না খুব সতর্ক থাকতে হবে। যদি আপনার কোনো শারীরিক জটিলতা থাকে, যদি ডাক্তার পরামর্শ দেন না রাখতে যেকোনো অসুস্থতা থাকে তাহলে রোজা রাখা থেকে বিরত থাকুন।

এছাড়া যে গর্ভবতী নারীরা সুস্থ আছেন তাদের রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই।
গর্ভাবস্থা ও ল্যাকটেটিং পিরিয়ডের নতুন মায়েরা আপনারা যদিও একটা নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন মনে রাখতে হবে এটা অসুস্থতা নয় এটা একটা ন্যাচারাল প্রসেস রব্বের দেয়া নিয়ামাহ, আমি যদি সুস্থ থাকি তবে কেন রোযার মতো ফরজ ইবাদত মিস করবো! বরং সন্তানকে নিয়েই এই সুন্দর ইবাদতটাকে উপভোগ করবো যেন তার উপর এটার সুন্দর প্রভাব পরে। তাই যারা সুস্থ আছেন, ভালো আছেন উপরে যে কথা গুলো লিখেছি ইফতার ও সাহরীর জন্য সেগুলো মেনে রোযা রাখলে ইন শা আল্লাহ কোনো অসুবিধা হবে না।

~ গর্ভবতী ও নতুন মায়েদের রমাদান

– ডাঃ সায়মা সাজ্জাদ মৌসি