নরমাল ডেলিভারিতে সাইড কাটা নিয়ে অনেকের অনেক ভীতি কাজ করে, অনেকে বলে থাকেন সাইড কাটার চেয়ে সিজার ভালো। সাইড কাটার প্রতি এমন আতঙ্ক থাকার কারণ এই সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকা। আজকে সাইড কাটা নিয়ে বুঝিয়ে বলতে চেষ্টা করবো সহজভাবে।
প্রথমেই জানি – সাইড কাটা বা এপিশিওটমি কি?
স্বাভাবিক প্রসবের সময় যখন মায়ের পেরিনিয়াম (যোনিপথ ও পায়ুপথের মধ্যবর্তী জায়গা) ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তখন ডাক্তার ডান বা পাশ থেকে যোনিপথ কিছুটা কেটে বড় করতে হয় এটিকেই বলে এপিশিওটমি বা সাইড কাটা।
এখন চলুন, কিছু ধারণা ক্লিয়ার করি আগে। কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে।
✳️ সিজার আর সাইড কাটা কি সেইম?
প্রথমেই বুঝতে হবে সিজার একটা মেজর অপারেশন আর সাইড কাটা একটা নরমাল ইনসিশন। সিজারে পেটের চামড়া, নিচের লেয়ার, জরায়ু কাটতে হয়, এনেস্থিসিয়া দিয়ে অজ্ঞান করতে হয়, পরবর্তী তে নানা ধরনের জটিলতা হয় কিন্ত সাইড কাটাতে এমন কিছুই নেই – সন্তান প্রসবের সময় পেরিনিয়াম ছিড়ে যাওয়ার চান্স থাকলে তখন সেখানে একটা লোকাল এনেস্থিসিয়া দিয়ে ডান বা বাম সাইড থেকে একটা প্ল্যান ওয়েতে কাটা হয়, যেটা তখন মা বুঝতেই পারে না কারণ তখন তিনি জায়গাটা অনেক পাতলা থাকে এবং অনেক পেইনে থাকে।
সন্তান প্রসবের পর সেই কাটা জায়গাটা সুন্দর করে সেলাই করে দেয়া হয় যেটার সুন্দর যত্ন নিলে দুই সপ্তাহের মধ্যেই সেরে যায়। অথচ সিজারে পুরো পেট কা-ট-তে হচ্ছে, সিজার পরবর্তী সময়েও নানা সমস্যা হয়। তাহলে কি করে সিজার আর সাইড কাটা এক হয়, রান্নাঘরে কাজ করার সময় হাত কেটে গেলে যেমন পরে ঠিক হয়ে গেলে বুঝা যায় না সাইড কাটাও সেইম।
✳️আগেকার যুগে বা বাসায় নরমাল ডেলিভারি তে তো সাইড কাটতে হয় না তাদের কিভাবে প্রসব হয়?
খুব কমন একটা প্রশ্ন। এটা বুঝিয়ে বলছি –
আগের দিনে বা এখনো যারা বাড়িতে প্রসব করান যেখানে কোনো প্রশিক্ষিত বা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই তারা সাইড কাটা বা সেলাই করা বলতে কিছুই জানতেন না। ফলে সেসময় বেশীরভাগ বাচ্চা যোনিপথ মারাত্মক ভাবে ক্ষত হয়ে ছিঁড়ে বের হতো। এই মায়েরা পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুকির মুখোমুখি হতেন। প্রসাব পায়খানা করতে গিয়ে সমস্যায় পরতেন, স্বামীর সঙ্গে মেলামেশা করতেও সমস্যা হতো।
কিন্ত হসপিটালে ডেলিভারী করালে এই সমস্যা হওয়ার সুযোগ নেই।সন্তান প্রসব অবশ্যই হাসপাতালে করাতে হবে। হাসপাতালে সন্তান প্রসব এজন্যই নিরাপদ, যখনই দেখা যায় মায়ের যোনিপথ ছোট বা বাচ্চার মাথা জোর করতে গেলে ক্ষতি হবে তখনই একটুখানি যোনিপথের সাইড কেটে দিতে হয়। তখন বাচ্চার মাথা সহ বাচ্চার শরীর সহজে চলে আসে। সন্তান প্রসবের পরপরই যোনিপথের কাটা সাইডটা সেলাই দেওয়া হয়, যেটা ১৫ দিনের মধ্যেই খুব সুন্দর সেরে যায়, ভয়ের কিছুই নেই।
✳️ সাইড কাটা কখন দরকার হয়?
অনেকে ভাবেন নরমাল ডেলিভারি মানেই সাইড কাটে। অথচ নরমাল ডেলিভারি তে যে সবসময়ই সাইড কাটা বা যোনিপথ কাটাতে হয় তা কিন্তু সঠিক নয়। ডেলিভারির সময় বাচ্চার ও মায়ের অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সাইড কাটার কখন দরকার হয় অবস্থা গুলো বুঝিয়ে বলি –
🔸প্রসবকালীন সময়ে যখন বাচ্চার মাথা আসতে থাকে তখন আমরা দেখি মায়ের যোনিপথের প্রশস্ততার তুলনায় বাচ্চার মাথা বড় সেক্ষেত্রে মাথা বের করে নিয়ে আসতে গেলে আশপাশের সব ছিঁড়ে যাওয়ার ও ক্ষতবিক্ষত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তখন একটুখানি সাইড কেটে দিলে বাচ্চার মাথাটা সহজভাবে চলে আসে।
🔸 যদি বাচ্চার মাথা অনেকক্ষণ ধরে আটকে থাকে বের না হয় সেক্ষেত্রে সাইড কেটে দিয়ে সহজে বাচ্চাকে বের করে আনা হয়।
🔸বাচ্চার যদি কোন সমস্যা তৈরি হয় যার ফলে দ্রুত প্রসবের প্রয়োজন তখন।
🔸বাচ্চার মাথা নিচে না থেকে যদি উপরে হয়।
🔸যদি এমন হয় কয়েক ঘন্টা ধরে চেষ্টার পর মা ক্লান্ত হয়ে গেছে কারণে এপিসিওটমি করার প্রয়োজন হতে পারে।
✳️ সাইড কাটলে কি প্রস্রাব পায়খানা, সহবাসে সমস্যা হয়?
অনেকের ধারণা সাইড কাটলে প্রস্রাব পায়খানা, সহবাসে সমস্যা হয়। এটা ভুল ধারণা। সাইড কাটার পর প্রস্রাব পায়খানা তে কোনো সমস্যা হয় না, সহবাসেও কোনো সমস্যা হয় না – প্রসব পরবর্তী যে ৪৫ দিন সহবাস বিরত থাকতে বলা হয় এর মধ্যেই সেলাই পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়, আগের মতো।
✅ সাইড কাটার পর যত্ন ও করনীয়ঃ
সাইডকাটার পর কিছু যত্ন নিতে হয়। প্রথমেই সেগুলো বুঝিয়ে বলছি –
১🔸ডাক্তার ব্যথার জন্য ঔষধ , এন্টিবায়োটিক ও তিন বেলা কাটা জায়গায় লাগানোর একটা মলম দিবেন, পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় সিরাপ সহ অনান্য ঔষধ – এই জিনিস সেগুলো নিয়ম অনুযায়ী মেনে চলা।
২🔸 অনেকে বলেন সেলাই এ পানি লাগানো যাবে না, এটা ভুল কথা – প্রস্রাবের পরপরই আপনার যোনিপথ ও নীচের দিকও ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে।
৩🔸 কুসুম গরম পানিতে ১ চামচ পভিসেপ আয়োডিন মিশিয়ে ১৫-২০ মিনিট পানিতে বসে থাকা, দিনে ২ বার করে – ১ মাস কন্টিনিউ করা।
৪🔸খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যুক্ত খাবার রাখুন, পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান ও সুষম খাবার খেতে হবে যেন কোষ্ঠকাঠিন্য না হয়।
৫🔸নিয়মিত হাটা ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পোস্ট ন্যাটাল ব্যায়াম (বিশেষ করে পেলভিক ফ্লোর এর ব্যায়াম) গুলো করা যা পেলভিক মাংশপেশীতে রক্ত সংবহন বাড়ায় যা ক্ষত স্থানকে দ্রুত সারাতে সাহায্য করে।
✳️ সাইডকাটার সেলাই কাটতে হয় না, এটা নিজে নিজেই পরে যায়। চিন্তার কিছুই নেই, ডেলিভারির পর, ৭ দিন পর যে ভিজিটে গিয়ে ডাক্তারকে দেখানো উচিত।
যদিও সাইড কাটাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো সমস্যা হয় না তবে কখনো কারো ডায়বেটিস বা যত্নের অভাবে বা অন্য কারনে কাটা জায়গায় সমস্যা হতে পারে। তাই জানা উচিত কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেনঃ
লক্ষ্মণ গুলো হলোঃ
🔸যদি বেশিদিন ব্যথা থাকে।
🔸 কাটা জায়গা থেকে পুঁজ অথবা গন্ধযুক্ত কিছু বের হয়।
🔸কাটা জায়গার আশপাশ লাল হয়ে যায়, ফুলে যায়, জ্বর হয় – এগুলোর যেকোনো একটি যদি চোখে পরে তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।
আশা করি লেখাটি পড়ে সাইডকাটা নিয়ে আপনাদের ধারণা ক্লিয়ার হবে। সিজার আর সাইড কাটা কখনোই এক না, বিশাল ব্যবধান। তাই সাইড কাটার ভয়ে সি সেকশনে যাওয়া বড় বোকামি যেন না করি। দরকার হয় এমন কোনো ধরনের সমস্যা না থাকলে অবশ্যই নরমাল ডেলিভারিই একমাত্র পছন্দ হওয়া উচিত, যদি সাইড কাটা লাগে উপযুক্ত যত্নের মাধ্যমে খুব দ্রুত তা সেরে যায় আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে সচেতন হই, অন্যকেও সচেতন করি ইন শা আল্লাহ 💜
~ সাইড কাটা ভালো নাকি সিজার
– ডাঃ সায়মা সাজ্জাদ মৌসি
Terrific work! That is the kind of information that should be shared across the internet. Disgrace on the search engines for no longer positioning this post higher! Come on over and talk over with my web site . Thanks =)