পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS) সম্পর্কে সচেতনতা

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS)

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS) বর্তমানে একটা কমন সনস্যা। পিসিওএস সমস্যায় ভুগছেন এমন নারীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে, প্রতি ১০০ জনে ১০-১৫ জন এই রোগে ভুগছেন। কিন্ত এই রোগে আক্রান্ত অনেক নারীই এই রোগের সাধারণ লক্ষণগুলোকে গুরুত্ব দেন না, অবহেলা করেন ফলে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হয়। তাই দরকার সচেতনতা, পিসিওএস সম্পর্কে জানা।

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS) আসলে কি ঘটে, একটু সহজ ভাষায় যদি বুঝিয়ে বলি –

কয়েকটি বিষয়ে সমন্বিত একটি হরমোনজনিত জটিলতা। এন্ড্রোজেন নামক ছেলেদের যে পুরুষালি হরমোনটা মেয়েদের শরীরে যতটুকু মাত্রায় থাকায় কথা, তার চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায় নিঃসৃত হয় যার কারণে তাযে ডিম্বাশয়, আমরা জানি প্রতি মাসে একটি করে ডিম্বাণু সেখান থেকে নিঃসৃত হয়, কিন্তু পিসিওএসের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে পরিপক্ক ডিম ফোটে নাই।

প্রতি মাসেই তাইঅপরিপক্ক ডিম গুলো ওভারীর গায়ে জমা হয়, মুক্তর মালার মত দেখা যায়। এই ডিম গুলো থেকে হরমোন নিঃসৃত হয় – নাম ইস্ট্রোজেন, যেহেতু ডিম গুলো বের হতে পারছে না হরমোন নিঃসৃত হতেই থাকে – সেজন্য এমন একটা অবস্থা তৈরি হয় যার জন্য শরীরের ইনসুলিন ভালো কাজ করতে পারে না। যেটাকে বলি ইনসুলিন রেসিস্টেন্ট। ইনসুলিন শর্করা জাতীয় খাবার থেকে গ্লুকোজ কোষে ঢুকায়৷ কিন্ত পিসিওএসে ইনসুলিন কাজ করতে না পারায় এই অতিরিক্ত ইনসুলিন শরীরের অনান্য জায়গায় চর্বি হিসেবে জমা হবে এবং পিসিওএস এর পেশেন্টদের ওজন বেড়ে যায়। যেসব নারীর ওজন বেড়ে যায় তাদের শরীর এর ফ্যাট সেল গুলো এমন কিছু হরমোন নিঃসৃত করে যেটা তাদের মাসিক টাকে বন্ধ রাখে। এভাবে পুরো প্রক্রিয়া টা পুনরাবৃত্তি হতে থাকে।

🔘 কারণঃ
পিসিওএসের সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি, তবে সাধারণত এটি বংশগত হয়। পরিবারে মা-বোনের পিসিওএসের সমস্যা থাকলে সেই নারীর পিসিওএস হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

📋পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS) লক্ষণঃ

  • অনিয়মিত মাসিক – ২/৩ মাস পর মাসিক হওয়া, মাসিক বন্ধ থাকা ঔষধ খেয়ে মাসিক হওয়াতে হয়।
  • হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া।
  • অবাঞ্চিত লোম।
  • ত্বকের বিভিন্ন অংশে কালচে ভাব।
  • অতিরিক্ত ব্রণ, আঁচিল।
  • বেশি চুল পড়া ও চুল পাতলা হয়ে যাওয়া।
  • উচ্চ মাত্রায় পুরুষালি হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া।

 

🔘পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS) হলে কি করবেন?

সম্পূর্ণ রূপে সমস্যাটাকে দূর করতে পারব না কিন্ত ঠিক চিকিৎসা ও লাইফস্টাইলের মান পরিবর্তনের মাধ্যমে পিসিওএস (PCOS) নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।  প্রথমত লাইফ স্টাইল মডিফিকেশন। এটা বলতে কি বুঝি?
✔️ যদি স্বাভাবিক এর চেয়ে ওজন বেশি থাকে, ওজন কমাতে হবে। এর জন্য দরকার নিয়মিত ব্যায়াম – ফিজিক্যালি এক্টিভ থাকতে হবে, কমপক্ষে ৫০-৯০ মিনিট এক্সারসাইজ
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

🔰 সঠিক খাদ্যাভ্যাসঃ

প্রথমেই জেনে নিবো কি কি খাবার খাওয়া উচিতঃ

✔️ফলিক অ্যাসিডঃ
ফলিক অ্যাসিড ফিমেল রিপ্রোডাক্টিভ অরগ্যান সুস্থ রাখতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। ইনফার্টিলিটি রোধ করতে এটি কার্যকর। পালং শাক, কলমি শাক, কলিজা, সবুজ শাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি, ডিম, বাদাম, পনির এগুলোতে ফলিক অ্যাসিড আছে।

লো কার্বোহাইড্রেট ও উচ্চ আমিষযুক্ত খাবার খাওয়াঃ  যেমন- মুরগির মাংস, মাছ, ডিম ইত্যাদি।

✔️আঁশযুক্ত বা ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারঃ আঁশযুক্ত খাবার ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তাই উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খান। ফলমূল ও শাকসবজি, শস্যদানা, ডাল ইত্যাদি। এগুলি ছাড়াও, আপনি আপেল, পেঁপে, কমলা এবং মরসুমী লেবু, তরমুজ, ডালিম, টমেটো, ব্রোকলি, ফুলকপি, টাটকা শাক, কুমড়ো, ক্যাপসিকাম এবং মটরশুটি জাতীয় শাক বার্লি, ওটস, ব্রাউন রাইস, ওটমিল, রাগি, জোয়ার, ছোলা, সয়া বিন ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।

✔️ভিটামিন বি-১২
ভিটামিন বি-১২ পিসিওএস রোগীদের প্রজননক্ষমতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।যেমন- ডিম, ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ, মাংস, কলিজা, ইত্যাদি।

কি কি খাবার খাওয়া যাবে না?

✔️ তেলে ভাজা খাবার, প্রসেসড ফুড
বাইরের ডেইরি প্রোডাক্ট, বাইরের খাবার , অতিরিক্ত লবণ বাদ দিতে হবে।

✔️অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয়, কোল্ড ড্রিংকস, কেক, পেস্ট্রি এই জাতীয় খাবার আপনার ওজন বাড়ানোর সাথে সাথে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS) থাকলে এগুলো একদমই বাদ দিতে হবে।

✔️ওজন কমানোর জন্য চাইলে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে পারেন।

✔️অবাঞ্চিত লোমঃ হীনমন্যতায় ভুগেন অস্বস্তি তে ভুগেন, এটাতে অস্বস্তি না ভুগে স্কিন বিশেষজ্ঞ কে দেখাবেন।
শুরু তেই যদি ট্রিটমেন্ট নিতে পারি, ঝুকি এড়ানো যায়। সচেতন না হলে লং টার্ম ইফেক্ট রাখে। ঠিক ভাবে কন্ট্রোলে না রাখলে।

◾অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া
◾ডায়বেটিস হতে পারে
◾বন্ধ্যাত্ব
◾হার্ট ডিজিজ সহ আরো নানা ঝুঁকি থাকে।

তাই পিসিওএসের লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের দেয়া পরীক্ষা নিরিক্ষা  এবং নিয়মিত চিকিৎসা করতে হবে। সঠিক সময়ে ডায়াগনোসিস,  সঠিক চিকিৎসা ওসুন্দর স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS) কে সারিয়ে তুলতে সক্ষম।

~ পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম(PCOS) নিয়ে সচেতনতা

– ডাঃ সায়মা সাজ্জাদ মৌসি

শেয়ার করুন:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
error: Content is protected !!