ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা

আমাদের দেশে প্রতিবার ই এই সময়টাতে চারপাশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ে। এবারো ডেঙ্গু তে অনেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। তাই ডেঙ্গু সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত যেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, প্রতিরোধ করার চেষ্টা ও প্রতিকার করতে পারি ইন শা আল্লাহ। ডেঙ্গু জ্বর মূলত এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। চলুন তাহলে জেনে নেই

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলোঃ

▪️উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর
▪️মাথা ব্যাথা
▪️হাত ও পায়ের জইন্ট এ ব্যাথা হওয়া
▪️ বমি হওয়া অথবা বমিবমি ভাব
▪️শরীরে ব্যাথা হওয়া
▪️চোখের পিছনে ব্যাথা হওয়া

ডেঙ্গু যখন গুরুতর হয় তখন কি কি  লক্ষণ দেখা দিতে পারেঃ

▪️ নাক এবং দাতের মারি থেকে রক্তক্ষরণ
▪️প্রচন্ড পেট ব্যাথা
▪️ক্রমাগত বমি হওয়া
▪️প্রস্রাবে এবং মলের সাথে রক্তপাত
▪️অনিয়ন্ত্রিত পায়খানা
▪️ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ (যা ক্ষতের মতো দেখাতে পারে)
▪️দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস

ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থাঃ

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সম্পর্কে জানা ও সতর্ক থাকলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা যাবে অনেকাংশে ইন শা আল্লাহ। যেমনঃ

▪️সকাল সন্ধ্যার সুন্নাহ যিকির গুলো করা। বিশেষ করে বিষধর প্রাণীর ক্ষতি থেকে নিরাপত্তার জন্য তিন বার বিকালবেলা পড়া,

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

অর্থ: আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের ওসিলায় আমি তাঁর নিকট তাঁর সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।

▪️মশারী ব্যাবহার করা
▪️আসে পাশে জমে থাকা পানি ফেলে দেয়া ▪️বাড়ির চারপাশে পরিচ্ছন্ন রাখা।

ডেঙ্গু রোগীকে কখন হাসপাতালে নিতে হবে?

ডেঙ্গু জ্বরকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথাক্রমে: ক্যাটাগরি ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’।

প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা সাধারণত স্বাভাবিক থাকে, তাদের শুধু জ্বর থাকে এবং অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির।
তাদের হাসপাতালে ভর্তি হবার কোন প্রয়োজন নেই।(ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ)

‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের সবই স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন তার পেটে ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে প্রচুর কিংবা সে কিছুই খেতে পারছে না।ডেঙ্গু রোগীর কিডনি কিংবা লিভারে সমস্যা, পেট ব্যথা, বমি অথবা অন্তঃসত্ত্বা, অথবা জন্মগত যদি কোনো সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।

‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। কিছু-কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ’র প্রয়োজন হতে পারে।

এর বাইরেও জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে যদি কোনো রোগীর দাঁতের মাড়ি বা নাক বা মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়, সারাদিন যে পরিমাণ প্রস্রাব হতো, তার পরিমাণ যদি কমে যায়, শ্বাসকষ্ট হলে দেরি করা উচিত নয়। ভর্তি করাতে হবে হাসপাতালে।

ডেঙ্গুর শক সিনড্রোম থেকে মানবদেহে পানিশূন্যতা তৈরি হয়। সঙ্গে সঙ্গে পাল্‌স রেট অনেকটা বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ খুব কমে যায়। শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। শ্বাসপ্রশ্বাস খুব দ্রুত চলে। রোগী অস্থির হয়ে ওঠেন। তখন সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত। গর্ভাবস্থায় বিশেষ করে এই সময়টায় , যখন ডেঙ্গুর খুব প্রাদুর্ভাব, জ্বর হলেই সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। ডাক্তারের কাছে দ্রুত যেতে হবে।(ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ)

ডেঙ্গুর টেস্ট কি কি আছেঃ

জ্বর কয়দিন তার উপর ভিত্তি করে আমরা ডেঙ্গু টেস্ট দিয়ে থাকি।
ডেঙ্গি হয়েছে কি না, নিশ্চিত জানতে সবথেকে ভালো হলো –  Dengue Real-Time PCR Test। এছাড়াও ডেঙ্গির জন্য রয়েছে Dengue Virus Antigen Detection (NS1) পরীক্ষা। প্রথম এক থেকে চারদিনের মধ্যে এই NS1 পজিটিভ থাকে। IgM (Serologic Tests for Dengue Virus) পজিটিভ হয় এক্ষেত্রে চতুর্থ দিনের পর থেকে। তা-ই পঞ্চম দিনে এই টেস্ট হলে সঠিক রিপোর্ট পাবেন। পাশাপাশি CBC  ( complete blood count) দিয়ে থাকি প্ল্যাটিলেট কাউন্ট দেখতে।(ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা)

ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসাঃ

ডেঙ্গু হলে ওষুধ হিসেবে শুধু প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে। প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ হচ্ছে প্রতিদিন চার গ্রাম। কিন্তু কোন ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

অনেকে না জেনে শরীরের বিভিন্ন অংশের তীব্র ব্যথা কমানোর জন্য বিভিন্ন ব্যথানাশক যেমন অ্যাসপিরিন, ক্লোফেনাক, আইবুপ্রোফেন–জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় এ–জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

ডেঙ্গু হলে কী করবেন, কী কী করবেন না-

ডেঙ্গু রোগীর ঘরোয়া চিকিৎসা ও কি কি খেতে হবে :

ডেঙ্গু রোগি যাদের মধ্যে মারাত্মক লক্ষ্মণ গুলো নেই তারা ঘরে থেকেই চিকিৎসা চালাতে পারেন। (ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা)যেমনঃ

▪️ জ্বরের জন্য শুধুমাত্র প্যারাসিটামল যা বলা হয়েছে।
▪️বেশি বেশি তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন: পানি, ডাবের পানি, লেবু ও অনান্য ভিটামিন সি জাতীয় ফলের রস, ভাতের মাড়, স্যালাইন, স্যুপ ইত্যাদি।
▪ প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার ডাল, ডিম, মুরগির মাংস ইত্যাদি যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।
▪️সামুদ্রিক খাবার, মটরশুটি এবং বাদাম
▪️ ওটমিল যা সহজপাচ্য কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
▪️চিন্তিত না হওয়া, স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করা ও আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল রেখে সকাল সন্ধ্যার যিকির গুলো নিয়মিত করা।

ডেঙ্গু হলে যা বর্জনীয়ঃ

▪️অ্যাসপিরিন, ক্লোফেনাক, আইবুপ্রোফেন–জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় এ–জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
▪️ভাজাপোড়া না খাওয়া, তৈলাক্ত খাবার না খাওয়া
▪️চিনিযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত মশলাযুক্ত  খাবার না খাওয়া
▪️কাঁচা বা আধা সিদ্ধ শাক সবজি না খাওয়া।

এই সময়টাতে চারপাশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাচ্ছে। গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু রোগকে গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে নিজে সচেতন হই, অন্যকেও সচেতন করি ইন শা আল্লাহ।

~ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা

ডাঃ সায়মা সাজ্জাদ মৌসি

শেয়ার করুন:

450 thoughts on “ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা”

  1. Narin ve tatlı, aynı zamanda escort sakarya sakarya arkadaş canlısı ve eğlenceyi seven bir insanım. Her zaman gülümseyen ve çok açık fikirli güzel bir hanımefendiyim. Doğal bir vücudum var, inanılmaz deneyim arayışında iseniz o halde ne arzuladığınızı bana iletebilirsiniz.

  2. Hi, just required you to know I he added your site to my Google bookmarks due to your layout. But seriously, I believe your internet site has 1 in the freshest theme I??ve came across.国产线播放免费人成视频播放

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
error: Content is protected !!