গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রাফি কখন করবেন?

গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রাফি

অনেক মায়েদের জিজ্ঞাসা থাকে গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রাফি কখন করবেন? কয়বার আল্ট্রাসনোগ্রাফি করবেন? অনেকে কনফিউশনে ভুগে থাকেন। তাদের জন্য আশা করি এই লেখাটি উপকারী হবে।

গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রাফি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা যার মাধ্যমে বাচ্চা ও মায়ের সঠিক পর্যবেক্ষণ এর মাধ্যমে একটি নিরাপদ ও সুস্থ প্রসব নিশ্চিত করা যায়। সাধারণত গর্ভের সময় প্রায় তিন থেকে চারবার আল্ট্রাসনোগ্রাফির প্রয়োজন হয়। তবে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ মায়েদের ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশিবারও দরকার হতে পারে। গর্ভকালীন যেকোনো সমস্যা, যেমন রক্তক্ষরণ, পানি ভেঙে যাওয়া, বাচ্চার নড়াচড়া কম হওয়া, বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি নিয়ে সন্দেহ ইত্যাদি যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাত্ক্ষণিক আল্ট্রাসনোগ্রাফিরও প্রয়োজন হতে পারে।

যে তিনটি সাধারণ আল্ট্রাসাউন্ড একজন প্রসূতির করানো উচিত, গর্ভাবস্থায় কখন আল্ট্রাসনোগ্রাফি করবেন এবং যে কারণে করা উচিত একটু বুঝিয়ে বলিঃ

গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রাম (প্রথম)ঃ

অর্থাৎ মাসিক বন্ধের দুই মাস বা ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানো উচিত। এই সময় আল্ট্রাসনোগ্রাফি এর মাধ্যমে জরায়ুর অভ্যন্তরে বাচ্চার সঠিক স্থানে হৃৎস্পন্দন হয়েছে কি না, ভ্রূণের সংখ্যা, প্রসবের সঠিক তারিখ তা নিশ্চিত করা যায়। এছাড়া গর্ভফুলের গঠন, এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি বা ভুল জায়গায় গর্ভসঞ্চার, গর্ভপাতের পূর্বাভাস আছে কিনা তা জানা যায়।

গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রাম (দ্বিতীয়)ঃ

১৮-২২ সপ্তাহের ভ্রূণটি একটি পূর্ণাঙ্গ মানবশিশুর রূপ ধারণ করে। এ সময় আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে প্রতিটি অঙ্গের গঠনগত ত্রুটি সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায় বলে একে অ্যানোম্যালি স্ক্যান বলে। যেমনঃ ডাউন সিনড্রোম, এডওয়ার্ড সিনড্রোম, পাটাউ সিনড্রোম, ফ্র্যাজাইল এক্স সিনড্রোম, টার্নার্স সিনড্রোম ইত্যাদি।জন্মগত হার্টের ত্রুটি, মস্তিষ্কের গঠনগত ত্রুটি, হাত-পায়ের হাড়ের অসংগতি নির্ণয় করা যায়। এছাড়াও –

❏ বাচ্চার চারপাশের তরল বা অ্যামোনিওটিক ফ্লুইড ঠিক আছে কি না।

❏ জরায়ুতে গর্ভফুলের অবস্থান নির্ণয় করা যায়।

ডাঃ সুস্মিতা আক্তার শম্পা

General Practitioners

MBBS (RU), PGT (Obs & Gynae)
Assistant Register (Ibne Sina Medical Collage)

গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রাম (তৃতীয়)ঃ

৩২-৩৬ সপ্তাহে অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে শেষবারের মতো আল্ট্রাসনোগ্রাফি সুস্থ শিশু জন্মদান ও প্রসবকালীন জটিলতা এড়ানোর জন্য সহায়তা করে। এই সময়ের আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে দেখা যায়-

➖ শিশু আকার, আয়তন ও ওজনে সঠিক মাত্রায় বাচ্চা বৃদ্ধি পেয়েছে কি না।

➖ বাচ্চার চারপাশের তরল বা অ্যামোনিওটিক ফ্লুইড, যা বাচ্চাকে পুষ্টি জোগায় ও বিনা আঘাতে নড়াচড়ায় সহায়তা তার স্বল্পতা বা আধিক্য নির্ণয় করা হয়, যা প্রসব পরিকল্পনায় ভিন্নতা আনতে পারে।

➖ জরায়ুতে বাচ্চার অবস্থান ইত্যাদি নির্ণয় করে। যেটা দেখে বুঝা যায় স্বাভাবিক/ নরমাল ডেলিভারি তে জটিলতা হতে বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তানের জন্মদানের প্রয়োজন হতে পারে কিনা।

➖ জরায়ুতে গর্ভফুলের শেষ অবস্থান নির্ণয়। যদি দেখা যায়, গর্ভফুল বা প্লাসেন্টা জরায়ুমুখকে সম্পূর্ণ ঢেকে ফেলেছে, তাহলে ওই মায়ের কখনোই স্বাভাবিক পথে সন্তান প্রসব করানো যাবে না। তখন অবশ্যই সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করাতে হবে। এতে প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হতে পারে, এজন্য আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে ঝুঁকি এড়াতে এই আল্ট্রাসনোগ্রাফি টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আল্ট্রাসনোগ্রাফি কেন দরকার হয় আশা করি বোনদের এখন বুঝতে সুবিধা হবে ইন শা আল্লাহ। সচেতন থাকি, সচেতনতা সৃষ্টি করি, নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করি ইন শা আল্লাহ ❤️

~ গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রাফি

ডাঃ সায়মা সাজ্জাদ মৌসি

শেয়ার করুন:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
error: Content is protected !!