কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

কোষ্ঠকাঠিন্য

অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগেন। কিন্ত কোন ঘরোয়া চিকিৎসা নেন না আবার চিকিৎসকের পরামর্শও নেন না। ফলে অবহেলার জন্য দীর্ঘদিন এই রোগে ভুগে নানা জটিলতার সৃষ্টি করেন। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলে সহজে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

কোষ্ঠকাঠিন্য স্বাভাবিক কারনে হতে পারে আবার রোগের কারনেও হতে পারে। এই সমস্যায় সময় মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিতে পারলে তা কোলন ক্যান্সারের আশঙ্কা বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। প্রথমেই জেনে নেয়া যাক কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয় বা কোষ্ঠকাঠিন্য এর প্রধান কারণ গুলোঃ

➖ পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার না খাওয়া।
➖ পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না খাওয়া। দৈনিক ১-২ অথবা ২ – ২.৫ লিটার পানি পান করা উচিত
➖এছাড়া কিছু ঔষধ যেমন আয়রন, ফলিক এসিড, ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট এর সাথে আঁশযুক্ত খাবার না খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
➖ যে সকল স্নায়ুগুলো পায়খানা তৈরি ও বের হতে ভূমিকা পালন করে কোনো রোগের কারণে সেসব স্নায়ুতে সমস্যা হলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
➖ থাইরয়েড, ডায়বেটিস এর সমস্যা, ক্যালসিয়াম বেড়ে গেলে, থাইরয়েড এর সমস্যা থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
➖ গর্ভাবস্থায় ও বিষণ্ণতা (Depression) এর কারনেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য যদি দীর্ঘদিনের না হয়, স্বাভাবিক কারনে হয়ে থাকে তাহলে তা ঘরোয়া ভাবেই প্রতিকার করা সম্ভব। তবে টানা ৭ দিনেও যদি ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে না সারে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে কারণ এটি নানা রোগের উপসর্গ। ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো বলে দিচ্ছিঃ

পরিমিত পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার খাওয়াঃ

পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় ও মল নরম হয়। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক প্রায় ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম ফাইবার খাওয়া উচিত। ফাইবার দুই ধরনের হয়ে থাকে এক ধরনের হলো দ্রবণীয় অপরটি অদ্রবণীয়। দ্রবণীয় ফাইবার মলকে নরম করতে সাহায্য করে। আর অদ্রবণীয় ফাইবার মলকে দ্রুত বের হতে সাহায্য করে। আমরা এ দু’ধরনের ফাইবার খাবার হতে পেয়ে থাকি। ওটমিল, শস্যদানা, ফল, মটরশুটি ও শাকসবজিতে ফাইবার রয়েছে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এ ধরনের ফাইবার জাতীয় খাবার গুলো বেশি বেশি খেতে হবে।

পযাপ্ত পরিমাণ পানি পান করাঃ

নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পানে প্রতিরোধ করা যেতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্যকে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে দুই লিটার পানি পান করা উচিত। তাছাড়া কাঁচা ফলমূলেও পানি রয়েছে রয়েছে যা শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে।

ইসুবগুলের ভুষিঃ

আমাদের দেশে কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় ইসুবগুলের ভুষি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভূষি অত্যন্ত কার্যকর বলে এর ব্যবহার এত বেশি।

🔰 ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়মঃ

১ গ্লাস পানিতে ২/৩ চামচ ইসপগুল সাথে চাইলে মধু এড করে ভালো করে মিক্স করে পান করতে হবে। অনেকে ইসবগুলের ভুসি পানিতে অনেক্ষনে ভিজিয়ে রেখে যখন ফুলে উঠে তখন পান করে। এই পদ্ধতি একদমই ঠিক না কারন – ইসবগুল একধরনের ডায়েটারি ফাইবার, যার কিছু পানিতে দ্রবীভূত হয়, কিছু হয় না। অন্ত্রের ভেতরে থাকাকালীন ইসবগুলের ভুসি প্রচুর পরিমাণ পানি শোষণ করে, কোনো কিছুর সঙ্গে বিক্রিয়া অন্ত্রের দেয়াল পিচ্ছিল করে দেয়। যেহেতু এটা কার্যকারিতার জন্য অন্ত্র থেকে পানি শোষণ করে, তাই দুই চা-চামচ ভুসি, পানি বা দুধে গুলিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই খেয়ে ফেলা ভালো। পানিতে দীর্ঘক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে এটা বাইরে থেকেই পানি শোষণ করে নেবে, অতএব কার্যকারিতাও কমে যাবে। কিছু জিনিস খেয়াল রাখা জরুরিঃ

✖️ দীর্ঘ সময় ধরে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে না। এতে সমস্যা হতে পারে।
✖️ যাদের খিঁচুনি, গিলতে অসুবিধা বা পরিপাকতন্ত্রের কোথাও সংকুচিত বা বাধা বা কিডনির সমস্যা আছে এমন লোকদের এটা নেওয়া উচিত নয়।
✖️ যদি এপেন্ডিসাইটিস ও স্টোমাক ব্লকেজের মত স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে তাহলে ইসবগুল খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

প্রোবায়োটিক খাবারঃ

যে খাবারগুলো অন্ত্রের হজমে সহায়তাকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোকে বৃদ্ধিতে সাহায্য করে সেগুলোকে প্রোবায়োটিক খাবার বলা হয়। যেমন দই-একটি প্রোবায়োটিক খাবার যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। হজম শক্তি বাড়াতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার গুলো খেতে হবে।

মধু ও লেবুঃ

কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে মধু ও লেবু দু’টোই খুবই উপকারী। দিনে তিনবার দুই চা চামচ করে মধু খান। এক গ্লাস গরম পানির মধ্যে মধু ও লেবুর রস মিশিয়েও খেতে পারেন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এটি পান করুন। ইন শা আল্লাহ কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। তবে অবশ্যই ডায়াবেটিক রোগীরা মধু খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

ক্যাস্টর অয়েলঃ

সকালে খালি পেটে এক বা দুই চা চামচ শুধু ক্যাস্টর অয়েল অথবা ফলের রসের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করবে ইন শা আল্লাহ। তবে দীর্ঘদিন এটি খাবেন না।

ডুমুর বা ত্বীন ফলঃ

কুর’আনিক ফল ডুমুর কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে অনেক উপকারী। টাটকা ডুমুর ফল অথবা শুকনো দু’টোই খাওয়া যায়। খাওয়ার আগে কিছুক্ষণ গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেতে পারেন।

নিয়মিত ব্যয়াম করাঃ

দিনে এটলিস্ট ৩০ মিনিট হাঁটুন কিংবা ব্যায়াম করুন এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অনেক সাহায্য করবে পাশাপাশি শরীরকে অনেক সুস্থ রাখবে।

এছাড়াঃ

✔️ বেলের শরবত পান করলেও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

✔️ উচুঁ কমোডের পরিবর্তে নিচু কমোড ব্যবহার করা।

✔️ মানসিক ভাবে হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করা।

ডাঃ সুস্মিতা আক্তার শম্পা

General Practitioners

MBBS (RU), PGT (Obs & Gynae)
Assistant Register (Ibne Sina Medical Collage)

এই ঘরোয়া চিকিৎসা গুলোর মাধ্যমে ইন শা আল্লাহ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে যদি স্বাভাবিক কারণে হয় কিন্ত এই পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে ৭ দিনেও যদি এটি ঠিক না হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে, কারণ কোষ্ঠকাঠিন্য অনেক রোগের উপসর্গ।

সচেতন থাকি, অন্যকে সচেতন করি ইন শা আল্লাহ।

~ কোষ্ঠকাঠিন্যের ঘরোয়া চিকিৎসা

ডাঃ সায়মা সাজ্জাদ মৌসি

শেয়ার করুন:

14 thoughts on “কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়”

  1. I have learn a few just right stuff here. Certainly worth bookmarking for revisiting. I surprise how a lot attempt you put to make this sort of magnificent informative website.

  2. I just like the valuable information you supply on your articles. I will bookmark your blog and take a look at again right here regularly. I am somewhat certain I’ll learn plenty of new stuff proper here! Good luck for the following!

  3. Undeniably believe that which you said. Your favorite justification seemed to be on the internet the simplest thing to be aware of. I say to you, I certainly get irked while people consider worries that they plainly don’t know about. You managed to hit the nail upon the top and also defined out the whole thing without having side effect , people could take a signal. Will probably be back to get more. Thanks

  4. Howdy, i read your blog from time to time and i own a similar one and i was just wondering if you get a lot of spam remarks? If so how do you stop it, any plugin or anything you can recommend? I get so much lately it’s driving me insane so any assistance is very much appreciated.

  5. My coder is trying to convince me to move to .net from PHP. I have always disliked the idea because of the expenses. But he’s tryiong none the less. I’ve been using Movable-type on numerous websites for about a year and am concerned about switching to another platform. I have heard good things about blogengine.net. Is there a way I can transfer all my wordpress content into it? Any help would be greatly appreciated!

  6. Superb blog! Do you have any tips for aspiring writers? I’m hoping to start my own blog soon but I’m a little lost on everything. Would you suggest starting with a free platform like WordPress or go for a paid option? There are so many options out there that I’m completely overwhelmed .. Any tips? Thank you!

  7. Hello there! This is kind of off topic but I need some guidance from an established blog. Is it difficult to set up your own blog? I’m not very techincal but I can figure things out pretty quick. I’m thinking about setting up my own but I’m not sure where to start. Do you have any points or suggestions? Cheers

  8. Merely wanna comment on few general things, The website design is perfect, the subject material is real good. “Crime does not pay … as well as politics.” by Alfred E. Newman.

  9. hello there and thank you in your information – I’ve certainly picked up anything new from proper here. I did however experience some technical points the usage of this web site, since I skilled to reload the web site many occasions prior to I could get it to load properly. I were puzzling over in case your web host is OK? Now not that I am complaining, however slow loading circumstances instances will sometimes have an effect on your placement in google and can harm your high quality rating if ads and ***********|advertising|advertising|advertising and *********** with Adwords. Anyway I’m including this RSS to my email and can glance out for a lot more of your respective interesting content. Ensure that you replace this once more soon..

  10. Throughout this great scheme of things you actually secure an A for effort and hard work. Where exactly you actually lost me was in your particulars. As it is said, the devil is in the details… And that couldn’t be much more correct in this article. Having said that, allow me inform you what exactly did work. The authoring is certainly extremely convincing and that is most likely the reason why I am taking an effort to comment. I do not make it a regular habit of doing that. Second, whilst I can easily see a leaps in logic you make, I am not really confident of exactly how you appear to connect your ideas which make the actual conclusion. For the moment I will subscribe to your issue however trust in the foreseeable future you connect the dots better.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
error: Content is protected !!